Science-VIII
তাপ প্রয়ােগ না করেও ঘরের উষ্ণতায় কিছু পরিমাণ জলকে ফোটানাে সম্ভব। তরলের উপরতলের উপর চাপ কমাতে থাকলে তরলটির স্ফুটনাঙ্ক ক্রমশ কমতে থাকে। এভাবে চাপ ক্রমশ কমাতে কমাতে এক সময় জলের স্ফুটনাঙ্ক ঘরের উষ্ণতায় এসে পৌঁছােবে এবং তখনই জল ফুটতে শুরু করবে যদিও উষাতা তখন ঘরের উষ্ণতায়ই আছে।।
কলকাতা এবং দার্জিলিং-এ জলের ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন হবে। কলকাতার চেয়ে দার্জিলিং প্রায় 7000 ফুট উঁচু। তাই কলকাতার চেয়ে দার্জিলিং-এ বাতাসের চাপ কম। চাপ কম হওয়ার জন্য ওখানে জলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। কলকাতা সমুদ্র তীরের কাছে বলে উন্নতা কম হওয়ায় চাপ বেশি, তাই কলকাতায় জলের স্ফুটনাঙ্ক দার্জিলিং-এর চেয়ে বেশি। দার্জিলিং-এ বাতাসের চাপ। কম বলে মাত্র 93-6°C উয়তায় জল ফুটতে শুরু করে।
কোনাে তরলের বাষ্পকে যে-কোনাে উষ্ণতায় রেখে চাপ প্রয়ােগ করলেও ওই বাষ্পকে তরলে পরিণত করা যায় না। কোনাে বাষ্পকে তরলে পরিণত করতে হলে একটি নির্দিষ্ট উত্নতায় রেখে বা ওই নির্দিষ্ট উষ্ণতার চেয়ে কম উষ্ণতায় রেখে চাপ প্রয়ােগ করলে বাষ্পটি তরলে পরিণত হবে। এই নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে ওই বাস্পের সংকট উষ্ণতা বলে। যেমন, অ্যামােনিয়ার সংকট উষ্ণতা 133"C।
দ্রবণের হিমাঙ্ক দ্রবণে দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। দ্রবণে দ্রাবের
পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলে দ্রবণটির হিমাঙ্ক আরও কমে যায়। উষ্ণতা কমতে কমতে এক
সময় দেখা যায় দ্রবণটি জমতে শুরু করেছে—এই অবস্থায় বিশুদ্ধ দ্রাবক কেল্লাস রূপে জমতে
থাকে,—ওর মধ্যে কিন্তু দ্রাব একটুও থাকে না। যেমন—একটি বিকারে সােডিয়াম ক্লোরাইডের
দ্রবণ নিয়ে দ্রবণটিকে ক্রমশ ঠান্ডা করা হলে এক সময় দেখা যাবে 0°C-এর আরও কম উষ্ণতায়
(জলের হিমাঙ্ক) কিছু পরিমাণ জল জমে বরফ হয়েছে। এই বরফের মধ্যে কোনাে সােডিয়াম
ক্লোরাইড নাই। এর নীচে যে দ্রবণটি আছে তার মধ্যে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ওই
দ্রবণে লবণের পরিমাণ বাড়ে, ফলে নীচের ওই দ্রবণটির হিমা আরও কমে যায়। এইভাবে
উষ্ণতা যখন প্রায় –21°C হয় তখন জল ও লবণ পৃথক না হয়ে একসঙ্গে জমে যায় এবং
কঠিনে পরিণত হয়। যে উন্নতায় এই ঘটনা ঘটে, সেই উষ্ণতাকে ইউটেকটিক উষ্ণতা বলে।
যে উষ্ণতা কোনাে দ্রবণের দ্রাবক এবং দ্রাব পৃথক না হয়ে একসঙ্গে সমগ্র দ্রবণটি জমে
কঠিনে পরিণত হয়, সেই উষ্ণতাকে ইউটেকটিক উষ্ণতা বলে এবং কঠিন মিশ্রণটিকে ইউটেকটি-
মিশ্রণ বলে।
জ্বর হলে সাধারণত কপালে ভেজা কাপড়ের জলপট্টি দেওয়া হয়। ভেজা জলপট্টির জল কপাল থেকে লীনতাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হতে থাকে। যার ফলে কপাল ও কপাল সংলগ্ন দেহাংশ ঠান্ডা হয় এবং রােগী আরাম বােধ করে।
আগুনে জল ঢাললে জ্বলন্ত বাষ্প থেকে জল তাপ গ্রহণ করে জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে থাকে, ফলে জ্বলন্ত বস্তুর তাপ ক্রমশ কমে আসে। এ ছাড়া ওই জলীয় বাষ্প জ্বলন্ত বস্তুর উপরে একটি স্তর গঠন করার ফলে বাইরের বায়ু সহজে জ্বলন্ত বস্তুটির সংস্পর্শে আসতে পারে না। এই কারণে অক্সিজেনের অভাবে বস্তুটির জ্বলন সম্ভব হয় না এবং জ্বলন্ত বস্তুর আগুন নিভে যায়।
ঢাকনা চাপা দিলে হাঁড়ির মধ্যেকার চাপ বাড়ে। চাপ বাড়ার ফলে জলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে এবং রান্নার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
উর্ধ্বাকাশের কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উষ্ণতা ও হালকা হয়ে উপরে উঠলে সেখানে চাপ কম হওয়ার জন্য প্রসারিত হয়। ফলে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পাওয়ার জন্য জলীয় বাষ্প ভাসমান ধূলিকণা, কয়লার গুঁড়াে প্রভৃতির উপর ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই ভাসমান জলকণাগুলিকে মেঘ বলে। মেঘ ও কুয়াশা একই কারণে সৃষ্টি হয় বলে ওই মেঘকে ঊর্ধ্বাকাশের কুয়াশা বলে।
তরলের উপর চাপ বৃদ্ধি করলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, তরল বেশি।উষ্ণুতায় ফোটে। জলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করলে জলের স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। বর্ধিত চাপে জল100°C থেকে বেশি উষ্ণুতায় ফোটে।চাপ হ্রাসে জলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায় এবং জলের উপরিতলের চাপ প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয়চাপ অপেক্ষা কম হলে, জল 100°C উষ্ণুতার নীচে ফুটবে।
বায়ুমণ্ডলের চাপের হ্রাস বা বৃদ্ধির ফলে জলের স্ফুটনাঙ্কের হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়।ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার বৃদ্ধি ফলে বায়ুর চাপ হ্রাস পেতে থাকে। উচ্চতার পরিবর্তনের সঙ্গেচাপের সম্পর্ক এবং চাপের পরিবর্তনের সঙ্গে জলের স্ফুটনাকের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে,কোনাে স্থানের উচ্চতা নির্ণয় করা যেতে পারে। যেমন দার্জিলিং সমুদ্রতল থেকে 2194মিটার উঁচুতে থাকায় দার্জিলিং-এ জলের স্ফুটনাঙ্ক 93.6°C৷
কোনাে পদার্থ যে তাপ গ্রহণ বা বর্জন করে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, কিন্তু অবস্থারপরিবর্তনের সময় উষ্ণতার কোনাে পরিবর্তন হয় না ফলে থার্মোমিটারে ধরা পড়ে না।
0°C উষ্ণুতার প্রতি গ্রাম বরফে, 0°Cউষ্ণুতার প্রতিগ্রাম জল থেকে ৪০ ক্যালােরিতাপ কম থাকে। ফলে 0°C উষ্ণুতার বরফকে সম-উম্নতার জলের চেয়ে বেশি ঠান্ডা মনে হয়।
বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে বলে বায়ু আর্দ্র থাকে। কিন্তু শীতকালে বায়ুঅপেক্ষাকৃত বেশি শুষ্ক থাকে। তাই বর্ষাকালে ভেজা কাপড় থেকে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলদ্বারা বেশি শােষিত হতে পারে না।
ঘর্মাক্ত শরীরে পাখার হাওয়া লাগলে শরীর ঠান্ডা হয় এবং আরাম বােধ হয়। কারণ,পাখার হাওয়ায় শরীরের বাম দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয় এবং প্রয়ােজনীয় লীনতাপের বেশিরভাগ অশে শরীর থেকেই সংগৃহীত হয়, ফলে শরীর ঠান্ডা হয়।
থার্মোমিটারকে জলে ডােবালে তার কুণ্ডের গায়ে কিছু কিছু জলবিন্দু লেগে থাকে,পরে তাকে জলের বাইরে আনলে কুণ্ডের গায়ের জলবিন্দুগুলি বাপীভূত হওয়ার জন্যপ্রয়ােজনীয় লীনতাপ থার্মোমিটারের গা, পারদ ও পারিপার্শ্বিক থেকে গ্রহণ করে। তাই উষ্ণুতাহ্রাসের দরুন পারদ আয়তনে সংকুচিত হয় ও ধীরে ধীরে নামতে থাকে।
গরমের দিনে দরজা-জানালায় ভেজা খসখস ঝুলিয়ে রাখলে ঘর ঠান্ডা হয়। কারণ,খসখসের জল ৰাষ্পে পরিণত হওয়ার সময়ে প্রয়ােজনীয় লীনতাপ প্রধানত ঘরের বায়ু থেকেসংগ্রহ করে, ফলে খসখস ও ঘরের বায়ু ঠান্ডা হয়।
জল জমে বরফ হলে তার আয়তন বেড়ে যায়। পাইপে জল যখন জমে যায়,তখন এই আয়তন বৃদ্ধিজনিত কারণে পাইপেগায়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং পাইপ ফেটেযায়। কিন্তু ঠান্ডা জলের পাইপ অপেক্ষা গরম জলের পাইপই ফাটে বেশি। কারণ ঠান্ডাজলে বেশি বায়ু প্রবীভূত থাকে এবং জল যখন জমে বরফে পরিণত হয় তখন অতিরিক্তবায়ু বেরিয়ে যায়, ফলে বরফের বর্ধিত আয়তন বায়ুর ওই স্থান দখল করে, তাই পাইপেবেশি চাপ পড়ে না। কিন্তু গরম জলে দ্রবীভূত বায়ুর পরিমাণ কম থাকে এবং জল জমেবরফ হলে এর আয়তন বেড়ে গিয়ে পাইপে প্রচণ্ড চাপ দেয় ফলে পাইপ ফেটে যায়।
মাটির কলশির গায়ে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে। জল এইসব ছিদ্রের ভেতর দিয়েবের হয় এবং বাইরের বায়ুর সংস্পরবাষ্পায়িত হয়। জলের এই অবস্থান্তরের জন্য প্রয়ােজনীয় লীনতাপ মূলত কলশি এবং ভিতরের জল থেকে আসে বলে কলশির জল।ঠান্ডা থাকে। কিন্তু ধাতব কলশিতে জল রাখলে জল এইরকম ঠান্ডা হয় না। কারণ ধাতব কলশিতে সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে না। ফলে জল ছিদ্রপথে বাইরে আসতে পারে না এবং বাষ্পীভূত হতে পারে না।
স্টিল বা কাচের গ্লাসের মধ্যে ঠান্ডা জল বাবরফ রাখলে গ্লাসের বাইরের গায়ে জলবিন্দু জমতে দেখা যায়। কারণ, গ্লাস ও গ্লাস সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে বরফ ক্রমাগত লীনতা সংগ্রহ করায় ওই বায়ুস্তরের উষ্ণুতা শিশিরাঙ্কের নীচে পৌছায়। ফলে ওই সময় গ্লাসের বাইরের গায়ে বায়ুর ঘনীভূত জলীয় বাষ্পকে জলবিন্দুর আকারে জমা হতে দেখা যায়।
শীতকালে বায়ু শুষ্ক থাকায় বাস্পায়নের হার বেশি হয়। এই সময় ঠোঁট থেকে জলীয়অংশের বাষ্পায়ন বেশি হওয়ায় ঠোঁট ফেটে যেতে দেখা যায়। গ্লিসারিন অনুদ্বায়ী তরল এবং এটি বায়ু থেকে জলীয় বাষ্প শােষণ করতে পারে। ফলে, শীতকালে ঠোটে গ্লিসারিন লাগালে ঠোঁট সহজে শুষ্ক হয় না এবং ঠোঁট ফাটা বন্ধ হয়।
স্থির জড় বস্তুর উপর বাইরে থেকে বল প্রয়ােগ না করলে বস্তুটিরচিরকালই স্থির অবস্থায় থাকার প্রবণতাকে তার স্থিতিজাড্য বলে। নিম্নে স্থিতিজাড্যেরউদাহরণ দেওয়া হল -বাস যখন হঠাৎ চলতে শুরু করে তখন বাসযাত্রীর দেহের বাসসংলগ্ন অংশ গতিপ্রাপ্তহয়। কিন্তু যাত্রীর দেহের উপরের অংশ স্থিতিজাড্যের জন্য স্থির থাকতে চায়। সেই জন্যযাত্রীর দেহের নীচের অংশ থেকে উপরের অংশ পিছিয়ে পড়ে, যার ফলে শরীর গাড়িরগতিরবিপরীতে হেলে পড়ে।
বাইরে থেকে বল প্রয়ােগ করা না হলে গতিশীল বস্তুর চিরকালই গতিশীলথাকার প্রবণতাকে গতিজাড্য বলে। নীচে গতিজাড্যের উদাহরণ দেওয়া হল।চলন্ত বাস হঠাৎ থেমে গেলে যাত্রীর দেহের নীচের অংশ স্থির হয়ে পড়ে, কিন্তু দেহেরউপরের অংশ গতিজাড্যের জন্য গাড়ির গতির দিকে এগিয়ে যায়, ফলে যাত্রী গাড়ির গতিরদিকে ঝুঁকে পড়ে।
সুইচ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে যে শক্তির দ্বারা পাখা ঘুরতে থাকে তা বন্ধ হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু তখনও গতিজাড্যের জন্য পাখাতে কিছু গতি থাকে। তাই সুইচ বন্ধ করবার পরওগতিজাড্যের কারণে পাখাটি কিছুক্ষণ চলতে থাকে।
গতিজাড্যের দরুন বলটির অনুভূমিক গতিবেগ সর্বদা গাড়ির গতিবেগের সমান হয়।কাজেই, উৎক্ষিপ্ত বলটি নেমে আসার পূর্ব পর্যন্ত গাড়িটি তার গতির অভিমুখে যতদূর যায়,গতিজাড্যের জন্য বলটিও ওই অভিমুখে ততদূর যায়। ফলে কিছুক্ষণ পর আরােহীর হাতেই এসে পড়ে।
কোনাে অ্যাথলিট লংজাম্প দেওয়ার আগে কিছুটা দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দিলে,অপেক্ষাকৃত দূরে যেতে পারে। নিউটনের প্রথম সূত্রানুসারে, সচল বস্তু গতিজাড্যের জন্য সরলরেখা বরাবর সমবেগ বজায় রাখতেচায় কাজেই ছুটন্ত অবস্থায় অ্যাথলিটের দেহ গতিজাড্যের জন্য সম্মুখ গতি বজায় রাখে এই সম্মুখ গতিঅ্যাথলিটকে সম্মুখেরদিকে এগিয়ে দেয়, ফলে অ্যাথলিট বেশি দূরে এগিয়ে যেতে পারে। স্থির অবস্থা থেকে লাফ দিলে গতিজাড্য জনিত সুবিধা লাভ করে না বলে অ্যাথলিট লাফিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
চলন্ত গাড়িতে আরােহীর সমস্ত দেহ গাড়ির সঙ্গে গতিশীল থাকে। যখন সে মাটিতে পা রাখে মাটির সংস্পর্শে তার দেহের নিম্নাংশ স্থির হয়; কিন্তু গতিজাড্যের জন্য দেহের উপরের অংশ অংশ গাড়ির গতির দিকে গতিশীল থাকে। গাড়ির গতির বিপরীত দিকে মুখ করে নামলে উলটো ,দিকে ছােটায় শরীরের সাম্য রাখা খুব কঠিন। ফলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।