High Quality Notes
উত্তর: ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে ইউরােপও আমেরিকায় ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে প্রচলিত রাজনৈতিক, সামরিক, সাংবিধানিক,ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের পরিবর্তে সমাজের অবহেলিত দিক গুলি সহ সমগ্র সমাজের ইতিহাস রচনায় উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় নতুন সামাজিক ইতিহাস নামে পরিচিত ইতিহাস সংশোধনবাদী ইতিহাস নামে পরিচিত l
উত্তর: বেঙ্গল গেজেট নামে সাপ্তাহিক ইংরেজি সংবাদপত্রটি জেমস অগাস্টাস হিকি ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকেপ্রকাশ করেন।
উত্তর: মহাফেজখানা গুলিতে সমকালীন বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদন, চিঠিপত্র, পুলিশ ও গােয়েন্দা রিপোর্ট প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে এগুলিতে সমকালিন বিভিন্ন ঘটনার যথার্থ তথ্যাদি পাওয়া সম্ভব।
উত্তর: প্রাচীনকাল থেকে সংঘর্যের মাধ্যমে ইতিহাসের গতি বয়ে চলেছে। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধাস্ত্রের বিবর্তন, সামরিকবাহিনীর প্রকৃতি ও সমরকুশলতা, যুদ্ধের প্রকৃতি ও প্রভাবকে তুলে ধরা হল সামরিক ইতিহাস।
উত্তর: সরলাদেবী চৌধুরানি 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থটিতে তাঁর সাহসী সহিংস বিপ্লবী আন্দোলনের মনােজ্ঞ বিবরণ দিয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক ইতিহাস নয় তার আত্মজীবনী থেকে নানা সামাজিক তথ্য পাওয়া যায়।।
উত্তর: ইতিহাস রচনার পদ্ধতি ও ইতিহাস বিষয়ে অনুসন্ধানের কলাকৌশল ইতিহাস তত্ত্ব নামে পরিচিত। ইতিহাস তত্ত্বে কয়েকটি দিক হল—গ্রিক ইতিহাস তত্ত্ব, রােমান ইতিহাস তত্ত্ব, খ্রিস্টান ইতিহাস তত্ত্ব, মধ্যযুগীয় ইতিহাস তত্ত্ব রেনেসাস ইতিহাস তত্ত্ব ও আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব।
উত্তর: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান সমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার উদাহরণ হল
1. বিপিন চন্দ্র পালের 'সত্তর বৎসর’,
2.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্মৃতি জীবন’
3. সরলা দেবী চৌধুরানী ‘জীবনের ঝরাপাতা’
4.মহাত্মা গান্ধীর ‘ দ্য স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ’
5. সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘ অন ইন্ডিয়ান পিলগৃম’ [ অসমাপ্ত]
6. জহরলাল নেহেরুর -’ অ্য়ান অটোবায়োগ্রাফি’ প্রভৃতি
উত্তর: অসুবিধাগুলি হল—
(i) ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনেক সময় অসম্পূর্ণ থাকে।
(ii) তথ্যগুলি অনেক সময় মনগড়া হয়।
(iii) গবেষণার কাজে এই তথ্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভরসা পাওয়া যায় না।
(iv) অনেক ক্ষেত্রে অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্য গবেষণার গুণগত মান কমিয়ে দেয়া।
উত্তর: প্রথমত, সংবাদপত্র কীভাবে জনমত গঠনে সাহায্য করে তা জানা যায়।
দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ সরকারের জনবিরােধী নীতির সমালােচনার বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে।
তৃতীয়ত, উনিশ শতক ও বিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদের উদ্ভব, প্রচার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা জানা যায়।
চতুর্থত, উনিশ শতকে এদেশের সমাজ ও ধর্মের ক্ষেত্রে যে সমস্ত কুসংস্কার ছিল এর বিরুদ্ধে সমাজ সংস্কারক ও ধর্মসংস্কারক কীভাবে সােচ্চার হয়েছিলেন তা জানা যায়।
উত্তর:
(i) আত্মজীবনী থেকে অনেক সময় সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির কথা জানা যায়।
(ii) আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
(iii) আত্মজীবনীতে উল্লিখিত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসাবে কাজে লাগতে পারে।
উত্তর: মানুষ যখন কোনো শিল্প মাধ্যম, যথা—সংগীত, নৃত্য, নাটককে বেছে নিয়ে সুকুমার বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তখন তা শিল্পচর্চা নামে পরিচিত। তাই শিল্প চর্চার উদ্ভব, বিবর্তন ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করাই শিল্প চর্চার ইতিহাস নামে পরিচিত।
উত্তর:
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উন্নত ক্যামেরার মাধ্যমে সচল ছবি তােলার প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন ঘটে এবং অগাস্টল্যুমিয়ের ও লুইল্যুমিয়ের নামক দুই ভাইয়ের হাত ধরে প্যারিসে প্রথম চলচ্চিত্রের উদ্ভব ঘটে (১৮৯৫ খ্রি.)।
প্রথমদিকে কোনাে ঘটনা বা গল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি এই সচল ছবি ছিল নির্বাক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ শতকের গােড়ায় আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে সবাক ও সচল ছবি তৈরি হয়, যা চলচ্চিত্র নামে পরিচিত।
উত্তর: 'বামাবােধিনী পত্রিকা’ থেকে জানা যায় যে প্রথমত, ভারতীয় নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তিই হল স্ত্রীধন' এবং এগুলি সাধারণত অলংকার ও পােশাক। দ্বিতীয়ত, বিবাহকালে নারীর 'পিতৃদত্ত” বা পিতার দেওয়া, ভ্রাতৃদত্ত' বা ভাইয়ের দেওয়া অলংকার ও উপহার ছিল স্ত্রীনের উৎস। তৃতীয়ত, নারীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি স্বামী অথবা পুত্রেরা পেত না, তা পেত তার কন্যা বা কন্যারা।
উত্তর:
'হিন্দু প্যাট্রিয়ট'-এ বাংলার জনগণের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন রচিত হয়েছিল, যেমন—
প্রথমত: ইংরেজ শাসন কালে অর্থকারী ফসল (যেমন পাট তুলা তৈলবীজ আখ) চাষ ও তা বিদেশে রপ্তানীর কারণে কৃষিপণ্য ও খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধির ফলে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
তৃতীয়ত, নীলকরদের অত্যাচার ও নীলচাষিদের দুরবস্থার কথাও জানা যায়।
উত্তর:
হিন্দু প্যাট্রিয়ট নামক সংবাদপত্র হল নীলচাষ ও নীলকর সাহেবদের অত্যাচার সম্পর্কে জানার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
কারণ,
প্রথমত, নীলবিদ্রোহের আগে ও সমকালে এই পত্রিকা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খবর সংগ্রহ করে তা জনসমক্ষে।
তুলে ধরে।
দ্বিতীয়ত, কৃষকদের কাছে নীলচাষ অলাভজনক হলেও দাদন বা অগ্রিম অর্থ গ্রহণের কারণে নীলচাষিরা নীলচাষ করতে বাধ্য হত।
তৃতীয়ত, নীলচাষে অনিচ্ছুক কৃষকরা নীলকর সাহেবদের দ্বারা বিভিন্ন ভাবে অত্যাচারিত হত।
উত্তর:
ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইনের গুরুত্ব হল—
প্রথমত, ভারতের শিক্ষাবিস্তারের জন্য প্রতি বছর অন্তত এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
দ্বিতীয়ত, এভাবে সরকার ভারতীয় প্রজাদের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
তৃতীয়ত, এই সুপারিশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিতর্ক।
উত্তর:
ভারতের উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্যে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম হান্টার নামে এক শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে, ভারত সরকার একটি কমিশন নিয়ােগ করে এটি হান্টার কমিশন নামে পরিচিত।
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এই কমিশন তার রিপাের্টে-- 1.প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরােপ সহ মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার উন্নতিকরণ , আর্থিক সাহায্য দান এবং স্ত্রী শিক্ষায় উৎসাহদানের সুপারিশ করে l
উত্তর:
উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদানগুলি হল-
প্রথমত, ১৮৫০ -এর দশকে দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শকের সরকারি পদে থাকার সুবাদে তিনি ৩৫টি (মতান্তরে ৪০টি) বালিকা বিদ্যালয় এবং ১০০টি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
দ্বিতীয়ত, তার উল্লেখযােগ্য কৃতিত্ব ছিল ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বেথুন সাহেবের সহযােগিতায় 'হিন্দু ফিমেল স্কুল’, স্থাপন ও এই স্কুলের জন্য নিয়মাবলি রচনা।
উত্তর:
শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশনের তিন সদস্য 'উইলিয়াম কেরি', 'উইলিয়াম ওয়ার্ড' ও 'জে মার্শম্যান' শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত ছিলেন তাদের এইরূপ পরিচিতির কারণ হলো
প্রথমত এরা তিনজন 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য শতাধিক স্কুল শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন
দ্বিতীয়ত,এদের উদ্যোগেই শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠ মিশন প্রেস বাংলা মহাশয় মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করে।
তৃতীয়ত,ভারতীয় সংবাদপত্রের বিকাশে এই তিনজনের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর:
ভারতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত—এই প্রশ্নকে কে কেন্দ্র করে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের শাসনকালে (১৮২৮-৩৫ খ্রি) জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে যায়। এইচ টি প্রিন্সেপ, কোল ব্রুক, উইলসনপ্রমুখ প্রাচ্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের সমর্থক হওয়ায় তারা প্রাচ্যবাদী এবং মেকলে, আলেকজান্ডারডাফ, সার্স, কোলভিল।প্রমুখ পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের সমর্থক হওয়ায় তারা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত হন।
উত্তর:
ভারতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত—এই প্রশ্নকে কে কেন্দ্র করে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের শাসনকালে (১৮২৮-৩৫ খ্রি) জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল প্রাচ্য পদ্ধতিতে এবং অপর দলপাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের পক্ষে মত দেন । দুটি দলের এই দ্বন্দ্ব প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দু নামে পরিচিত।
উত্তর:
শিক্ষাক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদের গুরুত্ব ছিল, এর দ্বারা—
(১) কোম্পানি প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয়।
(২) ভারতে জনশিক্ষার নীতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে 'জনশিক্ষা কমিটি’ বা ‘কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন' গঠিত হয়।
উত্তর:
জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি লর্ড মেকলে তার এক প্রস্তাবে লর্ড বেন্টিঙ্ককে বলেন যে, জল যেভাবে ওপর থেকে নীচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে ভারতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে তা ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে, মেকলের এই নীতি ক্ৰমনিম্ন পরিসুত নীতি বা চুইয়ে পড়া নীতি নামে পরিচিত।
উত্তর:
ফিমেল জুভেনাইল সােসাইটি হল শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন যেটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিত।
উত্তর:
বাের্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাবিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন যা উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা নামে পরিচিত। উডের ডেসপ্যাচ-এ যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলি হল-
(১) একটি পৃথক শিক্ষাদপ্তর গঠন,
(২) কলকাতা, বােম্বাইওমাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা,
(৩) শিক্ষক শিক্ষন ব্যবস্থা প্রচলন,
(৪) উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি।
(৫) স্ত্রীশিক্ষার প্রসার প্রভৃতি।
উত্তর: বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম আত্মজীবনী গ্রন্থ হল 'আমার জীবন' । 'আমার জীবন'-এর রচিয়তা হলেন রামসুন্দরী দেবী।
উত্তর: হিন্দু কলেজ (১৮১৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠায় রাধাকান্ত দেব, ডেভিড হেয়ার, বৈদ্যনাথ মুখােপাধ্যায়, স্যার হাইড ইস্ট প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
উত্তর: বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ড্রিঙ্কওয়াটার বিটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল—(১) তিনি প্রথমে বাংলা মাধ্যমেএবং পরে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেন। (২) নারীদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮৪৯খ্রিস্টাব্দে (৭ মে) হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমান বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন।
উত্তর: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র মদুসূদন গুপ্ত ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করেন। মধুসূদন গুপ্তর শবব্যবচ্ছেদের কাজে তাকে সহায়তা করেন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র রাজকৃষ্ণু দে, উমাচরণ শেঠ,দ্বারকানাথ গুপ্ত, নবীনচন্দ্র মিত্র প্রমুখ।
উত্তর: জমিদাররা তাদের অধীনে পাইকের কাজ করা চুয়াড়দের নগদ অর্থে বেতনের পরিবর্তে যে খাস জমি ভােগকরতে দিত তাকে বলা হয় পাইকান জমি। এই জমি ছিল নিষ্কর জমি। কিন্তু কোম্পানি এই নিষ্কর জমির ওপর রাজস্বধার্য করলে এবং পাইকান জমি কেড়ে নিলে পাইকরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
উত্তর: ছােটোনাগপুরের রাচিতে এই বিদ্রোহের সূচনা হলেও ক্রমশ এই বিদ্রোহ সিংভূম, মানভূমি, হাজারিবাগ, পালামৌজেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও বহু আগেই এই বিদ্রোহ প্রকাশ পেয়েছিল সিংভূম জেলার শােনপুর পরগনায়।
উত্তর: ছােটোনাগপুরের রাচিতে এই বিদ্রোহের সূচনা হলেও ক্রমশ এই বিদ্রোহ সিংভূম, মানভূমি, হাজারিবাগ, পালামৌ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও বহু আগেই এই বিদ্রোহ প্রকাশ পেয়েছিল সিংভূম জেলার শােনপুর পরগনায়।
উত্তর: বিরসা মুন্ডা ছিলেন মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা। তার ব্যাক্তিত্ব, প্রচেষ্টা ও সাংগঠনিক প্রতিভার ফলেই মুন্ডাবিদ্রোহ তীব্রতর হয়ে উঠেছিল এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রসারিত হয়েছিল। তিনি মুন্ডাদের অরণ্য সম্পদের অধিকারের ওপর সরকারিবিধি নিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলেন। এজন্য তিনি ব্রিটিশ ছাড়াও জমিদার ও পুলিশের বিরুদ্ধে তিনি সশস্ত্র আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। মুন্ডাদের কাছে ভগবান রূপে পূজিত এই মহান নেতা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন ।
উত্তর: বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ তিতুমির ওরফে মীর নিসার আলি বারাসাত মহকুমায় যে বিদ্রোহে সূচনা করেন তা বারাসাত বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ হয়।
উত্তর:
বারাসতের কাছে নারকেলবেড়িয়া গ্রাম তিতুমির চাষি ও বেকারদের সংঘবদ্ধ করে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ
করেন। তিনি এখানে অস্ত্রশস্ত্র জড়াে করে নিজেকে বাদশাহ বলে ঘােষণা করেন এবং জমিদারদের খাজনা দিতে নিষেধ করে নিজে খাজনা দাবি করেন। কলকাতা থেকে আগত ইংরেজ বাহিনীর গােলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা পুড়ে যায় এবং বাঁশেরকেল্লার মধ্যেই তিতুমীর এর মৃত্যু হয় [ 1831 খ্রিস্টাব্দে]
উঃ। ১৮৫৭ খ্রীঃ সিপাহী বিদ্রোহ ভারত ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে। স্যার লােপেল গ্রীফিনের মতে ১৮৫৭ খ্রীষ্টারে বিদ্রোহ “ভারতীয় আকাশ হইতে অনেক মেঘকে দূরে সরাইয়া দেয়।”
(The Mutiny swept the Indian sky clear of many cloud. )
প্রথমত: ইংলণ্ডের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ স্পষ্টই বুঝিতে পারিয়াছিল যে, একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হস্তে এত বড়সাম্রাজ্যের শাসনভার ছাড়িয়া দেওয়া নিরাপদ নহে। এই কারণে ব্রিটিশ কোম্পানির শাসনেরঅবসান ঘটাইয়া ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলিয়া যায়। এখন হইতে ইংলণ্ডেররাজা বা রাণী ভারতের রাজা বা রাণী হইলেন। ইংলণ্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার পক্ষে ভারতে।
শাসন পরিচালনার দায়িত্ব একটি কাউন্সিল ও সেক্রেটারির হন্তে ন্যস্ত করা হইল। রাণীর প্রতিনিধি হিসাবে
ভারতের গভর্নর জেনারেল কে ভাইসরয় বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হইল।
দ্বিতীয়ত: মহারাণীর ঘােষণা দ্বারা লর্ড ডালহৌসী-প্রবর্তিত স্বত্ববিলােপ নীতি পরিত্যক্ত হইল। এইঘােষণায় বলা হইল, ব্রিটিশ সরকার আর ভারতবর্ষে রাজ্যবিস্তার করিবেন না ইহার ফলে দীর্ঘকাল প্রচলিত ভারতে ব্রিটিশ অধিকার বিস্কৃতির নীতির পরিবর্তন ঘটিল, সাত শতেরও অধিকদেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ শাসনের বহিভূত থাকিযা গেল ইহাব্যতীত দেশীয় রাজগণের উত্তরাধিকার তাহাদের নিজ নিজ আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হইবে স্থির হইল। দত্তক পুত্র গ্রহণের ব্যাপারে তাঁহাদের পূর্ণ
স্বাধীনতা থাকিবে।
তৃতীয়ত: ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় জাতীয়দের অধিক পরিমাণে অংশগ্রহণের নীতিও গৃহীত হইল।জাতিধর্ম নির্বিশেষে কেবল মাত্র যােগ্যতার ভিত্তিতে ভারতীয়দের সরকারি চাকুরীতে নিয়ােগের নীতি গৃহীত হইল।
চতুর্থত: ১৮৩৩খ্রীষ্টাব্দে মাদ্রাজ ও বােম্বাই কাউন্সিলের আইন-প্রবর্তনের ক্ষমতা কলিকাতা কাউন্সিলের হস্তে ন্যাস্ত্ করা হইয়াছিল। ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দের কাউন্সিল এ্যাক্ট পাস করিয়া বােম্বাইও মাদ্রাজ কাউন্সিলের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ফিরাইয়া দেওয়া হইল। এই সকল কাউন্সিলে ভারতীয় সভ্য গ্রহণের ব্যবস্থাও করা হইল।
পঞ্চমত: ভারতীয়গণ যাহাতে ইংরাজদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদে উদ্বদ্ধহইয়া ঐক্য বদ্ধ হইতে নাপারে সেইজন্য ইংরাজ সরকার হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভেদনীতি প্রচার করেন।ভারতে ব্রিটিশশাস নেরনিরাপত্তা বিধানই ছিল ইহার উদ্দেশ্য। এই সময় হইতেই সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রােপণের চেষ্টা শুরু হইল।
ষষ্ঠত: ভারতীয় সিপাহীদের সংখ্যার অনুপাতে সামান্য সংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য রাখিবার বিপদ বুঝিতে পারিয়াব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আরও বহু ব্রিটিশ সৈন্য ভারতে আনাইয়া ভবিষ্যতে সিপাহী বিদ্রোহের পথ রুদ্ধ।করিতে চাহিয়াছিল। ইহা ব্যতীত বিভিন্ন প্রকার দায়িত্বমূলক পদে কেবলমাত্র ইংরাজ কর্মচারী নিয়ােগের নীতি গৃহী�
উঃ।বড়লাট লর্ড ডালহৌসীর আমলে ভারতে প্রথম রেলপথ নির্মিত হয়। ভারতের পরিবহণ ও যােগাযােগের উন্নতির ক্ষেত্রে রেলপথের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারত একটি বিশাল দেশ।এই বিশাল দেশের মধ্যে দ্রুত ও নিয়মিত যােগাযােগ স্থাপনের ক্ষেত্রে রেলপথের বিশেষপ্রয়ােজন। ভারতের পরিবহণব্যবস্থার আধুনিকীরণ করিয়া গরুর গাড়ীর যুগ হইতে ভারতে রাষ্ট্রীয় যানের যুগ প্রবর্তনের মধ্য দিয়া নূতন যুগের সুচনা হইয়াছিল। লণ্ড ভালহৌসী কেন্দ্রীয় পাবলিক ওয়ার্কস দপ্তর (P. W. D. ) স্থাপন করিয়া প্রতি প্রদেশে রাস্তাঘাট নির্মাণের দায়িত্ব দেন। ভারতের রেলপথগুলি প্রথমে সরকার নিজ হাতে নির্মাণ না করিয়া জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সাহায্যে নির্মাণ করেন। এই কোম্পানিগুলি ছিল বিলাতী। এই বিলাতী কোম্পানিগুলি ভারতে রেলপথ নির্মাণের জন্য যে মূলধন নিয়োেগ করে তাহার উপর শতকরা পাঁচ টাকা হারে সুদ দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হইলে ইহারা ভারতে রেলপথ নির্মাণের কাজে হাত দেয়। তাহা ছাড়া রেল বসাইবার জন্য বিনামূল্যে জমি দেওয়া রেল কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি হইলে সরকার তাহা পুরণের প্রতিশ্রুতিও দেয়। ইহার ফলে বিলাতী কোম্পানির মালিকানায় ভারতে রেলপথ নির্মিত হয়। এইরূপ ব্যবস্থায় বিলাতী কোম্পানিগুলির মুনাফার সুযােগ বাড়িয়া যায়। সেইজন্য ১৮৭৩ খ্রী: কোম্পানিকে উঠাইয়া দিয়া নিজ হাতে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেন। সরকারী রেলপথ বিভাগ এই সময়ে সিন্ধু, পাঞ্জাব, রাজপুতনা ও উত্তর বাংলার দুর্গম অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ করে।কিন্তু এই সরকারই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিলাতের কম্পানি গুলি এবং মুনাফালোভী মূল ধনীরা তুমুল সমালোচনা করলে ইংরেজ সরকার পুনরায় ইংল্যান্ডের কোম্পানিগুলিকে ভারতের রেলপথ নির্মাণের অনুমতি দিলে নীলগিরি, দিল্লি- কালকা, বেঙ্গল-সেন্ট্রাল উত্তর পশ্চিমবঙ্গ রেলপথ স্থাপিত হয়।এই কোম্পানিগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ করিয়া কোটি কোটি টাকা মুনাফা।বিলাতি কোম্পানিগুলির প্রচুর মুনাফার বিরুদ্ধে ভারতে অভিরাতে সমালোচনা হইলে এ্যাওয়ার্থ কমিশন তদন্ত করিবার জন্য নিযুক্ত হয়। এই কমিশন সরকারের নিজ হাতে রেলপথ সুপারিশ করে। ইহার ফলে বিংশ শতাব্দীতে ভারত সরকার প্রধান রেলপথ গুলির নির্মাণ ও পরিচালনা নিজ হাতে নেন।
উত্তর: ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উডের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলি ছিল—
• শিক্ষার প্রসারের জন্য একটি পৃথক শিক্ষাদপ্তর তৈরি করা।
প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষাবিস্তার ও নারীশিক্ষার উপর গুরুত্ব আরােপ করা।
• সরকারি মডেল স্কুলগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
• শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা করা।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ভারতে শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে চার্লস উডের প্রতিবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
উত্তর :কোনাে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণ যখন শিল্প-সংস্কৃতি ধর্ম, ভাষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে
এক বা একাধিক কারণে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ বলে মনে করে, তখন তাদের সেই চেতনাকে
জাতীয়তাবাদী চেতনা বলা হয়।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইউরােপের নানা ঘটনা 'ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনা সারে বিশেষ
প্রভাব বিস্তার করেছিল। যেমন—
(i) ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকার উপনিবেশবাসীদের হাতে
ইংরেজদের পরাজয়ের ঘটনা শিক্ষিত ভারতীয়দের মনে ধারণা সৃষ্টি করে যে, 'ইংরেজরা
অপরাজেয় নয়।
(ii) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের তিন মহান আদর্শ—সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা ভারতবাসীকে
উদ্বুদ্ধ হতে সহায়তা করে। এমনকি ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লব ও ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সার্বিক ভােটাধিকার ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অধিকার ভারতীয়দের
সচেতন করে তােলে।
(iii) জার্মানিতে ইটালির ঐক্য আন্দোলন ভারতবাসীকে জাতিগত ভাবে ঐকবদ্ধ করে তুলতে
উদ্বুদ্ধ করেছিল। ম্যাসিনি ও গ্যারিবল্ডির স্বদেশপ্রেম ভারতীয় শিক্ষিত সম্প্রদায়কে।
উৎসাহিত করেছিল।
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের শাসনকালে স্যার Jon Ralley নেতৃত্বে "Ralley Commission"
গঠিত হয়। ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সংগঠন, শিক্ষার মানােন্নয়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ।
বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই কমিশন গঠিত হয়। Ralley কমিশন ‘ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’ নামেও
পরিচিত। এই কমিশনের রিপাের্টের ভিত্তিতে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রবর্তিত
হয়। এই আইনে বলা হয়—
(i) বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানােন্নয়নের জন্য যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়ােগ করা হবে।
(ii) বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার মনােনীত সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
(iii) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওপর সরকারি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
(iv)বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলেজগুলিতে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
উত্তর। কৃষক বিদ্রোহের কারণগুলি হল-
(১) ভারতে ইংরেজদের সাম্রাজ্য বিস্তারের
একমাত্র |
ছিল সাম্রাজ্যবাদী বাণিজ্যিক স্বার্থ। তাই, পলাশির
যুদ্ধের অব্যাহতির পরেই তারা ইংরেজ ব্যতীত সকল
ইউরােপীয় বনিক ও দেশীয় বনিকদের বিতাড়িত করে।
(২) কোম্পানির
সরকার প্রবর্তিত নতুন
রাজস্বব্যবস্থা
ও ভূমি রাজস্ব নীতি, চিরাচরিত
বিচারব্যবস্থার স্থলে নতুন বিচারব্যবস্থা, ভারতীয়
সমাজব্যবস্থায় ইংরেজদের হস্তক্ষেপ ভারতীয়দের
মনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
(৩) মােগল যুগে জমির সাথে প্রজাদের সরাসরি
স্বত্ব বা সম্পর্ক ছিল। জমিদার ছিল রাজস্ব আদায়কারী
মাত্র। কিন্তু ইংরেজ প্রবর্তিত নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার
জমির উপর প্রজাদের কোনাে প্রকার স্বত্ব থাকে না।
জমিদার জমির সর্বেসর্বা। তাই,জমিদার প্রজাদের উপর
ইচ্ছেমতাে করভার চাপাতে পারত এবং তাদের জমি
| থেকে উৎখাত করতে পারত। রাজস্ব।
আদায়ের জন্য তারা প্রজাদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাত
(৪) এ সময় মহাজন শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এর ফলে
ঋণগ্রস্ত কৃষকের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে।
(৫) ইংরেজরা জোর করে প্রজাদের তাদের জমিতে।
ধান চাষের পরিবর্তে পাট, তুলা, নীল,আফিম প্রভৃতি
বাণিজ্যিক ফসল চাষ করতে বাধ্য করত।
(৬) রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় ইংরেজরা ছিল।
জমিদার। রাজস্ব আদায় করার জন্য প্রজাদের উপর
অকথ্য অত্যাচার চালাত। তাদের জমি থেকে উৎখাত
ভােগ্যপণ্য।
(৭) এ সময় ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে প্রচুর।
উৎপাদিত হয়। এইসব ভােগ্যপণ্যের
বাজার ছিল উপনিবেশ ভারতবর্ষ। ইংরেজরা কৌশলে।
ভারতীয় পণ্যাদির উপর প্রচুর করভার চাপিয়ে দেশীয়
শিল্পের সর্বনাশ ঘটায়। এর ফলে ভারতে প্রচুর বেকার
কারিগর ও কুটির শিল্পের সৃষ্টি হয় ।তারা কৃষিকাজে যােগদান করে সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
উত্তর। সুচনা : ভারতে ইংরেজদের স্বৈরাচারা |
শাসন, শােষণ, সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম
প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তােলে কৃষকেরা। এই |
বিদ্রোহ কৃষকবিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই সমস্ত কৃষক
বিদ্রোহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল সন্ন্যাসী ও ফকির
বিদ্রোহ।
সময়কাল : ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী ও ফকির
বিদ্রোহের সূচনা হয়। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই বিদ্রোহ
চলেছিল।
০ অন্যতম
নেতৃত্বগণ সন্ন্যাসী ও ফকির
বিদ্রোহের অন্যতম নেতারা হলেন, ভবানী পাঠক, দেবী
চৌধুরানি, মজনুশাহ, মুসা শাহ, চিরাগ আলি প্রমুখ।
কারণ : মােগল যুগের মধ্য ও শেষভাগে সন্ন্যাসী |
ও ফকির সম্প্রদায় বাংলা ও বিহারে স্থায়ীভাবে বসবাস।
শুরু করে। তারা কৃষিকাজকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ
করে কৃষিজীবীতে পরিণত হয়। কিন্তু তারা সন্ন্যাসী ও
ফকির সম্প্রদায়ের পােশাক পরত। বছরে একবার
কৃষক সন্ন্যাসীরা তীর্থভ্রমণে যেত। কিন্তু ইংরেজরা
তীর্থযাত্রীদের উপর কর ধার্য করে। এর ফলে
তীর্থভ্রমণে বাধার সৃষ্টি হয় এবং তারা বিদ্রোহ করে।
কৃষক বিদ্রোহের এটি অন্যতম প্রধান কারণ।
এছাড়া যেহেতু তারা কৃষিকাজকে জীবিকা হিসাবে
গ্রহণ করেছিল। এর ফলে তারা ইংরেজ কর্তৃক প্রবর্তিত
স্বৈরাচারী ভূমি-রাজস্ব নীতির শিকার হয়। তাই সন্ন্যাসী
ও ফকির সম্প্রদায় বিদ্রোহ করে।
বিদ্রোহে তাদের সঙ্গে যােগদান করে বাংলার
কৃষক সম্প্রদায় ও মােগল বাহিনীর কর্মচ্যুত সেনারা। |
• বিদ্রোহের ব্যাপ্তি : সর্বপ্রথম ঢাকাতে এই
বিদ্রোহের সূচনা হলেও ক্রমে তা দাবানলের মতাে
বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ
প্রভৃতি স্থানে সম্প্রসারিত হয়।
• বিদ্রোহের বিবরণ : ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী |
ও ফকির বিদ্রোহীরা ঢাকার ইংরেজদ
এসময় ইংরেজ সেনাপতির সাথে মজনুশাহের সংঘর্ষ
হয়। মজনুশাহ পরাজিত হন। কিন্তু রংপুর ও দিনাজপুর
জেলায় ইংরেজ সেনাবাহিনী পরাজিত হয়। অবশেষে
বগুড়ায় মরার যুদ্ধে মজনুশাহ পরাজিত হয়। তার
ভাই মুসাশাহ কিছুদিন বিদ্রোহ চালায়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে
বিদ্রোহীরা সিপাহিদের পরাজিত করে। ইংরেজ
সেনাপতি টমাস বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন। ১৭৭৩
খ্রিস্টাব্দে আরও দুজন সেনাপতিকে বিদ্রোহীদের দমন
করতে পাঠানাে হয় কিন্তু তারাও পরাজিত ও নিহত
হন। উত্তরবঙ্গ, বিহারে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ
ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ওয়ারেন হেস্টিংস ভুটানের
রাজা ও বারাণসীর রাজার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
অবশেষে ইংরেজ সেনাবাহিনী কঠোর হস্তে এই বিদ্রোহ
দমন করে।
• ব্যর্থতার কারণ :
(১) নেতাদের অভিজ্ঞতার
অভাব,
(২) সাংগঠনিক দুর্বলতা,
(৩) যােগাযােগ
ব্যবস্থার অপ্রতুলতা,
(৪) সাম্প্রদায়িক বিভেদ,
(৫)
উন্নত ধরনের (বন্দুক) অস্ত্রের ব্যবহার।
• মন্তব্য : ওয়ারেন হেস্টিংস সন্ন্যাসী ও ফকির
বিদ্রোহকে ভারতের যাযাবর ও পেশাদার ডাকাতের
উপদ্রব বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে
একটি কৃষক বিদ্রোহ। উইলিয়াম হান্টার, গ্যারেট
প্রমুখেরা একে কৃষকবিদ্রোহ বলেছেন।
**********
উত্তর। পাইক হল একপ্রকার রক্ষী। এরা জমিদারের
পক্ষে অতি সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লড়ে। এরা সমাজে
শান্তি বজায় রাখে ও জমিদারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমন
করে। --১৮১৭-১৮ খ্রিস্টাব্দে এই পাইক বিদ্রোহ
'ঘটেছিল। পাইকেরা সামরিকভাবে প্রশিক্ষিত ছিল না।
তারা ছিল কৃষক যারা প্রয়ােজনে জমিদারের পক্ষে লড়াত
• বিদ্রোহের কারণ : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
প্রবর্তিত ভূমি রাজস্ব নীতি সকলকেই বিক্ষুদ্ধ
করেছিল। নিয়নি ৩ রাজ র বৃদ্ধির কারণে বহু জমিদার
উ, মন হলি। এরকম প্রিটিশবিরােধী কার্যকলাপের
কারণে ওড়িশার রদ জেলার রাজা বা জমিদারের
সম্পত্তি সরকারি খাস ভবনে পরিণত হয়। এর ফলে তার কর্মচারীরা পদচ্যুত হয়। তার পাইকরা বেতন হিসাবে 'পাইকান জমি' বা জায়গার পেয়ে যেত।
জমিদারি চলে যায় পাইকরা তাদের জায়গির হারায়। এ
অবস্থায় তারা বিদ্রোহ করে।
বিদ্রোহের বিবরণ : খুরদার রাজার সেনাপতি
বিদ্যাধর মহাপাত্রের নেতৃত্বে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে পাইক
বিদ্রোহের সূচনা হয়। বিদ্রোহীরা বাহারামপুরের
ইংরেজ কুঠি বা সরকারি কার্যালয় আক্রমণ করে |
১০০জন ইংরেজকে হত্যা করে। এরপর তারা খুরদার |
দিকে অগ্রসর হয়। বিদ্রোহীরা খুরদার সরকারি
খাজাঞ্জি খানা লুটপাট করে সরকারি কার্যালয়ে আগুন।
ধরিয়ে দেয়। সরকারি কর্মচারীরা প্রাণভয়ে পালাতে
থাকে। ১৮১৭-১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ দক্ষিণ |
ওড়িশ্যায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পরে ইংরেজরা |
নির্মম অত্যাচারের দ্বারা এই বিদ্রোহ দমন করে।।
**********
উত্তর : ভিলরা প্রধানত পশ্চিম ভারতের অধিবাসী।
তাদের বাস ছিল খান্দেশ প্রদেশে। তারা ছিল সৎ,
স্বাধীন এবং স্বনির্ভর।
বিদ্রোহের কারণ : ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা
খাদেশপ্রদেশ দখল করলে ভিলরা ক্ষুব্ধ হয়। ভিল
উপজাতি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে গ্রাহাম লিখেছেন যে,
ভিলরা ইংরেজ প্রবর্তিত আইনকানুন, ভূমিরাজস্ব নীতি
সম্পর্কে সন্দেহপ্রবণ ছিল এবং সহজে তা মেনে নিতে
পারেনি। তাছাড়া নানান অর্থনৈতিক কারণও ভিলদের
বিদ্রোহী করেছিল।
বিদ্রোহের বিবরণ : ১৮১৯ ও ১৮২৭ |
খ্রিস্টাব্দে ভিলরা বিদ্রোহ করে। তবে ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে
বহিরাগত শােষক শ্রেণির (মারাঠা সাউকার) বিরুদ্ধে
ভিলদের বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। ভিলরা |
মারাঠীয় মহাজনদের শােষণের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিল।
এর ফলে তাদের দেখলেই ভিলরা তাদের নাক-কান |
কেটে দিত।
গুরুত্ব: এর ফলে খাদেশ থেকে মারাঠা সূচনায় বিশে
সাউকার বা মহাজনদের বিদায় ঘটে।
**********
উত্তর: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে এসব ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারত ছাড়ো আন্দোলন। ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার অব্যবহিত পরেই গান্ধীজী 1942 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন।1942 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর হরিজন পত্রিকা তে ভারতছাড়ো নামে প্রবন্ধ লেখেন। তাতে তিনি বলেন--"
শাসনের অবিলম্বে অবসান চাই। ভারতের স্বাধীনতা
চাই কেবল ভারতের স্বার্থে নয়—চাই বিশোর
নিরাপত্তার জন্য নাৎসীবাদ, ফ্যাসীবাদ, সমরবাদ,
অনা সাজ্যবাদ এবং এক জাতির উপর
অন্য জাতির আক্রমণের অবসানের জন্য। কংগ্রেস
ওয়াকিং কমিটি দ্বারা এই প্রস্তাব স্বীকৃতি লাভের পর
১৯৪২ সালের ৯ই আগস্ট হতে এই আন্দোলন শুরু
হয়। গান্ধীজীর Do or Die' এবং ‘করেঙ্গে ইয়ে।
মরেঙ্গে’ বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত
মানুষ এ আন্দোলনে এগিয়ে আসে।
আন্দোলনের সূচনা তবে আন্দোলনের শুরুতেই
গান্ধীজী গ্রেপ্তার হন ও পরে পরে গ্রেপ্তার হন।
জওহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল, আব্বাস
তাজোয়ারী প্রমুখ প্রথম সারির নেতারা। তখন
সরােজিনি নাইড় এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
ঐতিহাসিক বিপিনচন্দ্রের মতে, ‘নেতৃত্ব ও কোনপ্রকার
সংগঠন ছাড়াই মানুষ আন্দোলনে যােগ দিয়েছিলেন।
আন্দোলনের কর্মসূচী : গান্ধীজী এ আন্দোলন
সম্পর্কে জানিয়েছিলেন ‘This is an open
rebellion. In this struggle secrecy is a sin.'
এক বৈদ্যুতিক শক্তি যেন দেশশুদ্ধ লােককে উদভ্রান্ত ও
দিশেহারা করে দিয়েছিল। যেখানেই তারা দল বেঁধে
গেছে সেখানেই শক্তির স্তম্ভ ভূমিসাং হয়ে গেছে এবং
অত্যাচারের প্রতীক মাথা নত করেছে। এই আন্দোলন।
দেশব্যাপী হরতাল, বন, রেলপথ ধ্বংস, অগ্নিসংযােগ
প্রভৃতির মধ্য দিয়ে ব্যাপক রূপ লাভ করেছিল। ক্রোধে
জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের বাঁধ ভেঙে পড়েছিল। তবে
গান্ধীজি বা নেহেরুর আন্দোলনের কর্মসূচী হিংসাত্মক
ছিল না।
আন্দোলনে ব্যক্তি ৯ থেকে ১৪ই আগস্ট
বােম্বাইতে, ১০ থেকে ১৭ই আগস্ট কলকাতায় পুলিশি
অত্যাচার উপেনা করে আন্দোলন উত্তাল হয়। এছাড়া
দিল্লী, আমােদাবাদ, মাদ্রাজ, কানপুর লগ্নেীতে রক্তক্ষয়ী
আন্দোলন শুরু হয়। বিহারের সিয়ারাম, পরশুরামের দল,
উত্তর প্রদেশে হিন্দুস্থান সােসালিস্ট', 'রিপাকলিকান
দল’ বাংলা অনুশীলন’ ও ‘মগাওর' দল আন্দোলনে
চরমপন্থা ভাবধারা এনেছিল। জহরলাল এর মতে এর ফলে মানুষ অহিংস শিক্ষা ভুলে গিয়েছিল।
আন্দোলনের প্রধান নেতৃবৃন্দ: জাতি-ধর্ম-বর্ণ
নির্বিশেষে বহু মানুষ এ আন্দোলনে যােগ দেয়। এ
আন্দোলনের প্রধান নেতৃবৃন্দ হলেন, সরষু পাণ্ডে,
পাতঙ্গিনী হাজরা, সুনীল ধাড়া, কনকলতা বড়ুয়া,
অজয় মুখার্জী প্রমুখরা হলেন উল্লেখযােগ্য। এ সময়
‘ফ্রি-ইন্ডিয়া' পত্রিকা এবং ‘Do or Die Congress
News Bulletin জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নেয়।
জয়প্রকাশ নারায়ণের উদ্যোগে ‘আজাদ দস্তা’ নামক
গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
বাংলায় আন্দোলনের প্রসার সর্বভারতীয়।
আন্দোলনের ঢেউ বাংলায় এসে পৌছায়। মেদিনীপুরে
দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রকৃয় শাসমল কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র
করে যে সংগ্রামের পটভূমি তৈরি করেন তার হাত
ধরেই ভারত ছাড়' আন্দোলন দ্রুতি ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলার দিনাজপুর, ভগবানপুর, কাথি, তমলুক,
বালুরহাট প্রভৃতি স্থানে গণ আন্দোলন ব্যাপক আকার।
ধারণ করে। ১৯৪২ খ্রীঃ মেদিনীপুরে মাতঙ্গিনী ও
রামচন্দ্র বেরার নেতৃত্বে লালবাড়ি দখল হলে পুলিশের
গুলিতে মাতঙ্গিনী শহীদ হন।
এরপরে অজয় মুখার্জীয় উদ্যোগে ‘তাম্রলিপ্ত
জাতীয় সরকার’ গড়ে ওঠে। সেনা সংগঠনের নাম হয়।
‘বিদ্যুৎ বাহিনী। বীরাঙ্গনা নারীদের নিয়ে গড়ে ওঠে।
ভগিনী সেনা।
সরকারী দমননীতি ও আন্দোলনের ক্ষয়ক্ষতি
ভারতীয়দের ক্ষোভের চরম প্রকাশ ঘটায় প্রায় ২৫০টি
স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫০০টির মত ডাকঘর নষ্ট হয়,
সরকারী অফিস ও থানা প্রায় ১৫০টির মত ক্ষতিগ্রস্ত
হয়। তবে এ আন্দোলন দমন করতে পুলিশও যথেষ্ট
নির্মম ছিল। প্রায় ৬০,০০০ জন গ্রেপ্তার, ১,৬০০ জন।
গুলিতে আহত এবং প্রায় ৭০০ জন গুলিতে নিহত হন।
সরকারের নির্মম দমননীতির জন্য আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
আন্দোলনের ব্যর্থতা বিভিন্ন দিক হতে
আন্দোলনের কিছু দুর্বলতার দিক ছিল যেমন—
প্রথমত, আন্দোলনে সর্বত্র সংহতি ও সমন্বয়ের অভাব।
ছিল। সরকারী নিষ্ঠুর দমননীতিতে আন্দোলন সফল হয়নি ।
দ্বিতীয়তঃ নেতৃত্ব ও সংগঠন হীনতার জন্য আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। গান্ধীজীর অনুপস্থিতিও এই আন্দোলন দুর্বল হয়ে ছিল বলে মনে করা হয়।
তৃতীয়তঃ কমিউনিস্টরা আন্দোলনে যোগ দেননি। এছাড়া মুসলিম লিগের জিন্নাহ, সাভারকার, হিন্দু
মহাসভার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী প্রমুখ প্রথম সারির
নেতারা আন্দোলন সমর্থন করেন নি। ফলে আন্দোলন।
সর্বাত্মক হয়ে ওঠেনি।
চতুর্থত, মন্বন্তরে বাংলায় প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান।
আন্দোলনের গুরুত্ব ভারতীয় স্বাধীনতা
আন্দোলনের ইতিহাসে এ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও তা
ইংরেজদের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছিল। এ আন্দোলনের
গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী।
প্রথমত, এ আন্দোলন প্রমাণ করেছিল যে,
জনগণের মনে কংগ্রেসের প্রভাব গভীর। অত্যাচারের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তারা। যাবতীয়। ত্যাগ।
আত্মবলিদানেও তৈরি।
দ্বিতীয়ত, মানুষ যে স্বাধীনতার জন্য দেশের মানুষ
সর্বস্ব দানেও রাজি—একথা ইংরেজরা বুঝতে পারে।
নেহেরুর মতে, “সংগঠন নেই, উদ্যোগ আয়ােজন নেই,
কোন মন্ত্রবল নেই, অথচ এক অসহায় জাতি
স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল—এ দৃশ্য
প্রকৃতপক্ষে বিস্ময়েরই ব্যাপার। তার মতে এটি ছিল
‘স্বতস্ফুর্ত গণ অভ্যুত্থান’। AICC এর মতে এটি ছিল
‘গণযুদ্ধ।
তৃতীয়ত, ভারতছাড়া আন্দোলন থেকে যে জাতীয়
জাগরণ ও ঐক্যবােধ গঠিত হয়, তা স্বাধীনতার সােপান
রচনা করে।
চতুর্থত, সর্বোপরি এ আন্দোলন। ভারতের।
স্বাধীনতাকে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরকে চূড়ান্ত করেছিল।
**********